অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৩৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক আজ শনিবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ড. এস জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত।
এদিকে বার্তা সংস্থা বাসসের খবরে বলা হয়েছে, আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হায়দ্রাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় এবং একান্ত বৈঠকের পর এবং তাঁদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আগে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তি ও স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে- অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা সহায়তা, বিদ্যুৎ, শান্তিপূর্ণ আণবিক শক্তির ব্যবহার, আউটার স্পেস, যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং গণমাধ্যম সংক্রান্ত বিষয়াবলি।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে খুলনা-কলকাতা পথে নতুন যাত্রীবাহী বাস সার্ভিস, পরীক্ষামূলকভাবে খুলনা-কলকাতা দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং পণ্য পরিবহনের জন্য বিরল-রাধিকাপুর রেলপথটি পুনরায় চালু করা হয়।
ঢাকা ও নয়াদিল্লি চারটি সমঝোতা স্মারক বিনিময় করেছে। এগুলো হচ্ছে- দ্বিপক্ষীয় বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা, তৃতীয় দফা ঋণসহায়তা, শান্তিপূর্ণ আউটার স্পেস ব্যবহার এবং কোস্টাল ও প্রটোকল রুটে যাত্রী ও পর্যটনসেবায় প্যাসেঞ্জার ক্রু সার্ভিস প্রটোকল আইন সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ভারতের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। তৃতীয় দফা ঋণসহায়তা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশকে সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারকটিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিউল হক এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ড. এস জয়শঙ্কর।
শান্তিপূর্ণভাবে আউটটার স্পেস ব্যবহার সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং ভারতের ডিপার্টমেন্ট অব স্পেসের সচিব এ এস কিরন কুমার। আর কোস্টাল ও প্রটোকল রুটে যাত্রী ও পর্যটনসেবায় প্যাসেঞ্জার ক্রু সার্ভিস প্রটোকল আইন সম্পর্কিত স্মারকটি দুই দেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা নিজ নিজ দেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
অন্যান্য স্মারক ও চুক্তিগুলো হচ্ছে- ‘বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপরেখা’ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক; ‘কৌশলগত ও ব্যবহারিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে’ ঢাকার মিরপুরের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের ওয়েলিংটনে (নীলগিরি) ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ‘জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও কৌশলগত শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে’ ঢাকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ও নয়াদিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ‘আণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সহযোগিতা’র বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিকসের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ভারতের ইলেকট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
‘পরমাণু নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণে কারিগরি তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতা’ সংক্রান্ত চুক্তি। বাংলাদেশে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিএইআরসি) ও ভারতের গ্লোবাল সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার এনার্জি পার্টনারশিপের (জিসিএনইপি) মধ্যে চুক্তি।
এ ছাড়া আরো স্মারক ও চুক্তির মধ্যে রয়েছে- সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-জিওভি সিআইআরটি) ও ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিমের (সিইআরটি-ইন) মধ্যে চুক্তি। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তজুড়ে সীমান্তহাট স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক। ভারতে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা তৈরির কর্মসূচির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক। নৌবিদ্যায় সহায়তার বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক। ভূবিদ্যা নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক। ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে সিরাজগঞ্জ থেকে লালমনিরহাটের দইখাওয়া এবং আশুগঞ্জ থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত নাব্য চ্যানেলের উন্নয়নে সমঝোতা স্মারক। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক। অডিও-ভিজ্যুয়াল সহ-প্রযোজনা চুক্তি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব ও ভারতের তথ্যসচিব এ দুটি চুক্তি ও স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা ঋণসহায়তা সমঝোতা স্মারকে সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সই করেন।
মোটরযান যাত্রী চলাচল (খুলনা-কলকাতা রুট) নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি ও চুক্তির স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরসে দুই দেশে সড়ক বিভাগের সচিব স্বাক্ষর করেন।এ ছাড়া, বাংলাদেশে ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণে অর্থায়নের চুক্তিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার সই করেন।এ সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিবসহ দুই দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই